>বর্তমান যুগে মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে, ততই যেন মানসিক অশান্তি, পারিবারিক ভাঙন, সামাজিক অবক্ষয় এবং আত্মিক শূন্যতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এমন হাহাকার কেন? প্রযুক্তির অগ্রগতি, বিলাসবহুল জীবন, উচ্চশিক্ষা—সবকিছু থাকা সত্ত্বেও মানুষ কেন শান্তি পাচ্ছে না? এর মূল কারণ হলো, আমরা জীবনের মূল দিকনির্দেশনা থেকে সরে এসেছি। সেই পথনির্দেশক হলো ইসলাম। ইসলাম শুধু একটি ধর্ম নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা আমাদের প্রতিটি কাজ, চিন্তা ও ব্যবহারে সঠিক পথ দেখায়। আত্মার শান্তির উৎস ইসলাম আত্মার জন্য যে শান্তি দেয়, তা অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর। আল্লাহ বলেন, "জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।" (সূরা রা'দ: ২৮)। আধুনিক জীবনের দৌড়ঝাঁপের মাঝে মানুষ যখন হতাশায় ভোগে, তখন আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ তাকে আত্মিক প্রশান্তি দেয়। পারিবারিক জীবনে ইসলামের দিকনির্দেশনা বর্তমান সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক কলহ, সন্তান-অভিভাবকের দূরত্ব ব্যাপকহারে বেড়েছে। অথচ ইসলাম পারিবারিক জীবনে ভালোবাসা, দায়িত্ব, সহনশীলতা ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়। নবীজির (সা.) জীবনে আমরা দেখি, তিনি তাঁর স্ত্রীদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত কোমল, দায়িত্বশীল এবং ভালোবাসাপূর্ণ। অর্থনৈতিক জীবনে ভারসাম্য ইসলাম আমাদের আয়-রোজগারের ক্ষেত্রেও সঠিক নীতিমালা দিয়েছে। হালাল উপার্জন, সুদমুক্ত লেনদেন, জাকাত ও সদকার মাধ্যমে অর্থনীতিতে ভারসাম্য আসে। বর্তমান ভোগবাদী সমাজে মানুষ যখন ধনসম্পদের পেছনে অন্ধভাবে ছুটছে, ইসলাম তখন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের আহ্বান জানায়। সামাজিক জীবনে সৌহার্দ্য ইসলাম এমন একটি সমাজব্যবস্থার কথা বলে যেখানে ধনী-গরীব, কালো-সাদা, উচ্চ-নিম্ন—সবাই সমান মর্যাদাপূর্ণ। সালাম দেওয়া, পরস্পরের খোঁজখবর নেওয়া, দুঃখে-সুখে পাশে থাকা—এসব ইসলামি আচরণ সমাজে সৌহার্দ্য গড়ে তোলে। নৈতিকতা ও আচরণে আদর্শ ইসলাম একজন মানুষকে শুধু ধর্মীয় আচরণ নয়, বরং সার্বিকভাবে একজন উত্তম চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। সত্যবাদিতা, amanah (আস্থা রাখা), বিনয়, ধৈর্য, ক্ষমা—এসব গুণাবলি একজন মুসলিমের স্বভাব হওয়া উচিত। আধুনিক সমাজে এইসব গুণের বড়ই অভাব। প্রযুক্তির যুগে ইসলাম অনেকে মনে করেন, ইসলাম পুরনো যুগের জন্য, প্রযুক্তির যুগে এর প্রয়োজন কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইসলাম প্রতিটি যুগের জন্যই উপযোগী। প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার, সময় ব্যবস্থাপনা, গোপনীয়তা রক্ষা—সবকিছুর মধ্যে ইসলাম আমাদের ভারসাম্য শিক্ষা দেয়। শিশুদের ইসলামি শিক্ষা আজকের শিশুরাই আগামীর সমাজনেতা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তাদের মধ্যে ইসলামি মূল্যবোধের অভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ছোটবেলা থেকেই নামাজ, কুরআন, নবীজির জীবনী, সহানুভূতি ও সত্যবাদিতার শিক্ষা দেওয়া জরুরি। উপসংহার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম শান্তি, সৌন্দর্য এবং ভারসাম্য প্রদান করে। আধুনিকতার নাম করে যদি আমরা ইসলামের মূল দিকনির্দেশনা ভুলে যাই, তাহলে যতই প্রযুক্তি বা ধনসম্পদ বাড়ুক, মানসিক শান্তি আসবে না। তাই প্রয়োজন আধুনিক জীবন ও ইসলামের মধ্যে একটি সুন্দর সমন্বয় গড়ে তোলা, যাতে আমরা দুনিয়াও গঠন করতে পারি এবং আখেরাতও সুন্দর করতে পারি।